২০১৮ সালের নভেম্বর মাসের সোমবারের কথা। চমৎকার আবহাওয়ার কারণে, হ্যানসন নামক নিলামকারী প্রতিষ্ঠানের সবাই বেশ উৎফুল্ল। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মার্টিন পেশায় একজন সংগ্রাহক। প্রাচীন জিনিসপত্র, শিল্পকর্মের প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ থেকে প্রায় সাত বছর ধরে সে একই পেশায় কাজ করছে। ডার্বির ধনী ব্যবসায়ীদের শখের জিনিসপত্র, সংগ্রহ নিয়ে এবারের নিলাম অনুষ্ঠান; তাই সে বেশ আগ্রহী।
অনান্য দিনের মতো মার্টিন, হ্যানসনের পুরাকীর্তি বিশেষজ্ঞ জেমস ব্রেঞ্চলির সাথে কাজ করছিল। পুরাকীর্তি বোঝাই ভ্যান থেকে কিছু মৃৎপাত্র আলাদা করার সময় সে কিছুটা হতভম্ব হয়ে যায়। মৃৎপাত্রের গায়ে আঁকা ছবির সাথে; তার নিজের সংগ্রহে থাকা একটি ছোট্ট মাটির পাত্রের সাদৃশ্য আছে কিনা তাই বসে ভাবতে থাকে। হতে পারে তা সিন্ধু সভ্যতার মৃৎপাত্র। বছর খানেক আগে, আরো বেশ কিছু মাটির পাত্রের সাথে মাত্র ৪ ইউরোতে যা সে কিনেছিলো। মৃৎপাত্রটি দেখামাত্রই তার পছন্দ হয়ে যায়। দুর্ভাগ্যবশত, সে পাত্রটিকে টুথব্রাশ রাখার কাজে ব্যবহার করে আসছিল।
সিন্ধু সভ্যতার মৃৎপাত্র
Indus Valley Pottery By Hansons Auctioneers
পুরাকীর্তি বিশেষজ্ঞ জেমস ব্রেঞ্চলির সাথে আলাপ করে সে নিশ্চিতভাবে জানতে পারে যে, মৃৎপাত্রটি আনুমানিক ১৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের অর্থাৎ প্রায় ৪০০০ বছর পুরোনো। মৃৎপাত্রটির কারিগর সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার মানুষ। নির্মাণশৈলী, মৃৎপাত্রের গায়ে নকশা আাঁকার কৌশল, নকশার উপাদানে একশৃঙ্গ বিশিষ্ট কাল্পনিক হরিণের ছবি এসব দেখে সহজেই বলে দেয়া যায় যে এটা সিন্ধু সভ্যতার মৃৎপাত্র।
তবে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা সাধারনত বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে মৃৎপাত্রের ধরণ, প্রকার ও সময়কাল সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন। প্রত্নতত্ত্বে মৃৎশিল্পের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, প্রত্নস্থল থেকে উদ্ধার করা প্রধান নিদর্শনের মধ্যে মৃৎপাত্র অন্যতম। মৃৎপাত্রের ছোট টুকরা বা ভাঙ্গা অংশ; প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কোনো সমাজের আর্থ-সামাজিক জীবনধারা অধ্যয়নের জন্য মৃৎপাত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
একটি প্রত্নস্থল থেকে কী পরিমাণে মৃৎপাত্র বা ভাঙ্গা টুকরা পাওয়া যাচ্ছে তা থেকেও অনেক তথ্য পাওয়া সম্ভব। যেমন- মৃৎপাত্র তৈরীর সংশ্লিষ্ট উপাদান, নকশার ধরণ ও প্রকারভেদ থেকে নদী তীরবর্তী গ্রাম বা নগর সভ্যতা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যেতে পারে। আবার একই প্রত্নস্থলে প্রাপ্ত আকারে ও নকশা ভেদে, ভিন্ন ভিন্ন মৃৎপাত্র অনেকসময় একই সভ্যতার বিভিন্ন পর্যায়কাল নির্দেশ করতে পারে। তাছাড়া প্রত্নস্থলে মৃৎপাত্রটি কোন স্তরে পাওয়া যাচ্ছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মৃৎপাত্র থেকে কি করে সময়কাল নির্ণয় করা সম্ভব? কোনো মৃৎপাত্রের অবশেষ বা নমুনাকে যদি উপাদান ও সীমানা বিচারে, প্রত্নস্থল থেকে যথাযথ ভাবে উদ্ধার করা যায়, তাহলে থার্মোলুমিনেসেন্স পদ্ধতির সহায়তায় অনেক তথ্য পুনরোদ্ধার করা সম্ভব। পরবর্তী পর্বে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা থাকছে। এর মাঝে আমরা সিন্ধু সভ্যতার অন্য একটি মৃৎপাত্রের সাথে সাধারন একটি তুলনা করতে পারি। দুটি পাত্রের ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যেতে পারে মাটির রং অথবা নকশাতে ইউনিকর্ন বা কাল্পনিক হরিণের ব্যবহার।
সিন্ধু সভ্যতার মৃৎপাত্র
Indus Valley Pottery By Gary Todd
তথ্যসূত্র
Indus Valley Pottery By Hansons Auctioneers
This work is licensed under a Creative Commons Attribution 4.0 International License.
No comment yet, add your voice below!