কুঁজো মহিষের উপাখ্যান

Reading Time: 3 minutes

বরফের আচ্ছাদন

প্রায় ১১৭০০ বছর আগেকার কথা। তখন উত্তর আমেরিকার বিস্তীর্ণ সমতল ভূমি থেকে ক্রমশ বরফের আচ্ছাদন সরে যাচ্ছে। উচুঁ প্যানিকাম ঘাসে ছেঁয়ে গেছে ‘ওয়ানাসকেউইন’ অঞ্চল। সবুজ ঘাসের লোভে কুঁজো মহিষের পাল এসে জড়ো হচ্ছে ‘ওপিমিহো’ জলধারার কাছে।

কুঁজো মহিষের উপাখ্যান
কুঁজো মহিষের ভাস্কর্য। ছবি: নৃ।
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-ShareAlike 4.0 International License.

তাদের পিছুঁ নিয়েছে ধূসর রঙের শিকারী নেকড়ের দল। এরা একে অপরের সাথে লড়াই করে এই অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র টিকিয়ে রাখে। ধূসর নেকড়ের পাশাপাশি কয়েকদল শিকারী ও সংগ্রাহক গোষ্ঠী মহিষের পালকে অনুসরণ করতে থাকে। তাদের মধ্যে ‘ওজিবওয়ে’ ও ‘ক্রী’ জনগোষ্ঠী অন্যতম। প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে ‘ওয়ানাসকেউইন হেরিটেজ পার্ক’ থেকে প্রায় ৬০০০ বছর আগে মানুষের বসতি স্থাপনের প্রমাণ মিলেছে।

সার্থক শিকারী

তারাই প্রথম নেকড়ের কাছে মহিষের পাল তাড়া করবার কৌশল জেনে নেয়। এছাড়াও সবচেয়ে দুর্বল বাছুড়টিকে ক্রমশ আলাদা করে ফেলার সহজ উপায়টিও তারা রপ্ত করে নেয়। পরবর্তীতে নিজেরাই মহিষ শিকারের অভিনব সব পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে থাকে। নতুন কৌশল শেখার মধ্য দিয়ে তাদের খাদ্য তালিকায় আমিষের যোগান সুনিশ্চিত হয়।মহিষ শিকারের দুইটি পদ্ধতি সম্পর্কে জানা যায়। প্রথমটি গোলাকার ঘের বা ফাঁদ তৈরি করে মহিষ শিকার করা। দ্বিতীয়টি মহিষের পাল তাড়া করে, খাদে ফেলে শিকার করা

তীর ধনুক; ওয়ানাসকেউইন। ছবি: নৃ।
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-ShareAlike 4.0 International License.

বিভিন্ন সময়কালে ওয়ানাসকেউইন বর্তমান থেকে অতীতে
হিমবাহ গলতে শুরু করেপ্রায় ১২০০০ বছর
বসতি স্থাপন৬০০০ বছর
মহিষ শিকারে ব্যবহৃত তীর, ধনুকের সন্ধান২০০০ বছর
মহিষ শিকারে ঘের বা ফাঁদ এর ব্যবহারপ্রায় ২০০০-৫০০ বছর
ভেষজ উদ্ভিদের ব্যবহার শুরু১৫০০ বছর
‘ল্যাকরোজ’ খেলার উদ্ভাবন৫০০ বছর
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-ShareAlike 4.0 International License.

তাবু

প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে আরো পাওয়া গেছে ২০০০ বছর পুরোনো তীর, ধনুক, কুঁজো মহিষের চামড়া দিয়ে বানানো তাবুর অবশেষ। ‘ক্রী’ জনগোষ্ঠীর ভাষায় এই তাবুর নাম ‘মিখিওয়াপ’। দৈনন্দিন জীবনে, সামজিক আচার ও মূল্যবোধের ক্ষেত্রে এর যথেষ্ঠ গুরুত্ব ছিলো। অনেকে একে ‘ঠিপি’ নামেও চেনে।

‘মিখিওয়াপ’ বা তাবু। ছবি: নৃ।
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-ShareAlike 4.0 International License.

স্থায়ী বসতি

‘ওয়ানাসকেউইন’ শব্দের অর্থ যেখানে মনের প্রশান্তি পাওয়া যায়। এরকম নামকরণের কারণ অনুমান করা যায়। অফুরন্ত মিঠা পানি ও কুঁজো মহিষের প্রাধান্যই পরবর্তীতে যাাযাবর জাতিগুলোকে স্থায়ী বসতি স্থাপনে উৎসাহিত করেছিলো। এ কারণেই উত্তরের সমতল ভূমিতে হাজার বছর ধরে আদিবাসীরা তাদের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের জন্য এই কুঁজো মহিষের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ছিল। বর্তমানে কানাডার সরকার একটি বৃহত্তর জাতীয় পরিচয় নির্মাণের লক্ষ্যে; সমতল ভূমি ও তার প্রথম অধিবাসীদের একটি সম্মিলিত উপাখ্যান রচনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে।

টাঁড়বারো

মহিষের গল্প শুনতে শুনতে বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের ‘আরণ্যক’ উপন্যাসের কথা মনে পড়ে যায়। সেখানে গহীন অরণ্যে বুনো মহিষের দেবতা টাঁড়বারো বাস করেন। দীর্ঘাকৃতির; কালো ছায়ার মতন তার শরীর। সেখানে আদিবাসী সাঁওতালদের বিশ্বাস; মানুষ যখন বুনো মহিষ শিকারের জন্য ফাঁদ পেঁতে রাখে, তখন দেবতা টাঁড়বারো বুনো মহিষের পালকে রক্ষা করেন। যদিও মানুষ হাত থেকে মহিষের পালকে রক্ষা করা সহজ নয়।

তথ্যসূত্র

https://wanuskewin.com/


This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-ShareAlike 4.0 International License.

No comment yet, add your voice below!


Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *